দেবব্রত মন্ডল ( বাঁকুড়া ) : কবি লিখেছেন " ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ , চায় দুটো ভাত , একটু নুন / বেলা বয়ে যায় , খায়নি ক ' বাছা , কচি পেটে তার জ্বলে আগুন " - সেই আগুনের তাপে দগ্ধ হয়েই দুমুঠো ভাতের জন্য শৈশবেও কঠিন হয়েছে বাস্তব ওদের কাছে । আর পাঁচজন সমবয়সী যখন খেলার আনন্দে মাতোয়ারা ওদের তখন দায়িত্ব নিতে হয়েছে " সংসার "নামক পাহাড়টার বোঝা টানার জন্য ।
ক্লাস ফোরের সুরজ শা, ফাইভের নুরউদ্দিন শাহ্। পাত্রসায়রের ফকিরডাঙ্গার এই দুই ভাই সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ে সাইকেল নিয়ে। তারপর স্থানীয় আইসক্রিম কারখানায় আইসক্রিম কিনে বৈশাখের তপ্ত রোদে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তা বিক্রি করে বাড়ির পথ ধরে তারা। তাদের বয়সী ছেলে মেয়েরা যখন পিঠের পড়াশুনা আর খেলাধুলায় ব্যস্ত, তখন সূরজ-নূরউদ্দিনরা জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে বেছে নিয়েছে আইসক্রিম বিক্রির পেশাকেই। হঠাৎ এই পেশাতেই কেন? এছাড়াতো আর কোন উপায় নেই। বাবা সামান্য রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। সংসার চলেনা। বাড়িতে ১৫ জন সদস্যের মুখে দু'বেলা খাবার তুলে দিতে এছাড়া আর অন্য কোন উপায় ছিলনা। তাই বাধ্য হয়েই এই পথে... অকপট জবাব সূরজ-নূরউদ্দিনদের।
কতেই বা বয়স ক্লাস ফোরের সূরজ শা-এর। মেরে কেটে ন'বছর। চলতি গ্রীষ্মের দাবদাহের মধ্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ক্লান্ত সে। আমাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে রাস্তার পাশেই বসে পড়লো সে। তার কথায়, 'আর পারছিনা, একটু বসি...'। তারপর সাইকের হ্যাণ্ডেলে ঝোলানো ব্যাগে রাখা জলের বোতল থেকে জল খেয়ে কিছুটা ধাতস্থ হলো সে।
ক্ষুদে এই দুই আইসক্রিম বিক্রেতার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসার। একটি ছোট্ট মাটির বাড়িতে গাদাগাদি করে ১৫ সদস্যের বাস।
দাদু গোলাম আম্বিয়া, মা আনসুরা বেগমরা বলেন, করোনা আবহে কাজ নেই। তাই বাধ্য হয়েই ছোটো ছোটো ছেলেদের আইসক্রিম ব্যবসায় নামাতে হয়েছে। সরকারীভাবে কোন সাহায্য পেলে হয়তো এই দিন দেখতে হতোনা বলে তারা জানিয়েছেন ।